মাহমুদ আবদুল্লাহ: ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের দুধনই গ্রামে ভিমরুলের আক্রমণে বাবা, মেয়ে ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার (১২ অক্টোবর) এ ঘটনা ঘটেছে। মৃতরা হলেন মাওলানা আবুল কাশেম, মেয়ে লাবিবা আক্তার ও ছেলে সিফাতুল্লাহ।
মাওলানা আবুল কাশেম ও সামছুন্নাহর দম্পতির ৫ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিল লাবিবা ও সিফাতুল্লাহ। বড় ছেলে হেদায়েতুল্লা ও এহাছানুল মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। বড় মেয়ে হাবিবা বিবাহিতা। মাওলানা আবুল কাশেম দুধনই বাজার মসজিদের ইমাম ছিলেন এবং স্থানীয় ইদারাতুল কোরআন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন।
মাওলানা আবুল কাশেমের ভাতিজা জিয়াউর রহমান জানান, বন্যা হওয়ায় বাড়ির কিছু লাকড়ি রাস্তার উঁচু জায়গায় শুকাতে দিয়ে আসছিলেন তার চাচা। শনিবার সকাল ১০টার দিকে এসব লাকড়ি আনার জন্য ছোট ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে নৌকায় যাচ্ছিলেন তিনি। রাস্তায় যাওয়ার কিছুটা আগে বাঁশঝাড়ে নৌকা আটকে যায়। এই বাঁশের ঝাড়ে ছিল ভিমরুলের চাক। তার চাচা নৌকা ছাড়াতে ব্যস্ত ছিলেন। তার কাছাকাছিই ছিলেন তিনি (জিয়াউর)।
জিয়াউর রহমান বলেন, ‘চাচাকে বলেছি, চাচা আপনার নৌকা যে জায়গায় আটকাইছে এইনে তো ভিমরুলের চাক পড়ে। চাচা তার দুই ছেলে-মেয়েকে নিজের বুকের নিচে নিয়ে নৌকার মাঝে শুয়ে ছিলেন, অন্যদিকে শত শত ভিমরুল চাচাকে আক্রমণ করে।’
পরে তাদের ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তারা। কিন্তু মাওলানা আবুল কাশেমের অবস্থা বেশি খারাপ দেখে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফটকের সামনে পৌঁছামাত্র দুপুর ১টার দিকে মারা যান তিনি। তার ছেলে ও মেয়ে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিল। বিকেল ৪টার দিকে মেয়ে লাবিবাকে (৮) মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরপর রাত ১০টার দিকে ছেলে সিফাতুল্লাহ (৫) মারা যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নুসরাত বলেন, ‘আমরা ছোট দুই সন্তানসহ সবাইকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে চাইলে তার পরিবার মাওলানা আবুল কাশেমকে নিয়ে যায়। শিশু দুটিকে কিছু ভালো দেখে আমাদের হাসপাতালে রেখে যান। বিকেলের দিকে লাবিবা মারা গেলে পরে ছেলেকে তার পরিবার ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে গেছে।’
ধোবাউড়া থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভিমরুলের কামড়ে বাবা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তিনি। ঘটনা সত্য।
আজ রবিবার সকাল ৯টায় দুধনই ঈদগাহ মাঠে তিনজনের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত জানাজায় স্থানীয় লোকজন ছাড়াও ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন জেলা এমনকি ঢাকা থেকেও লোকজন অংশগ্রহণ করেন।